Press "Enter" to skip to content

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যার দিন যা ঘটেছিল

১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর মায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর মাত্র ৪০ বছর বয়সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন শ্রী রাজীব গান্ধী। তিনি ছিলেন দেশের তরুণতম প্রধানমন্ত্রী। দেশের তরুণতম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজীব গান্ধী নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে জাতির ইতিহাসে এক বিরল নজির স্থাপন করেন। তাঁর মা নিহত হওয়ার পরে শোকের পরিবেশ কাটিয়ে উঠে তিনি লোকসভা নির্বাচনের নির্দেশ দেন। নির্বাচনে কংগ্রেস অতীতের সমস্ত নজির ম্লান করে দিয়ে বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। লোকসভার ৫০৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস দখল করে নেয় ৪০১টি আসন ৷ দেশের ৭০ কোটি মানুষের নেতা হিসেবে এভাবেই রাজনৈতিক জীবনে তাঁর উত্থান।

ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সপ্তম প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ১৯৯১ সালের ২১শে মে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের শ্রীপেরামবুদুরে এক আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন। ভারতের ইতিহাসে এই ঘটনা রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। উক্ত বিস্ফোরণে রাজীব গান্ধী ছাড়াও আরও চোদ্দো জন নিহত হয়েছিলেন। রাজীব গান্ধীকে হত্যা করেন তেনমোঝি রাজারত্নম নামে লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম বা এলটিটিই এর এক মহিলা সদস্য। উল্লেখ্য, এই সময় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সঙ্গে বিজড়িত ছিল। দুটি তদন্ত কমিশন এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বটি উদঘাটিত করে। এলটিটিই প্রথমে রাজীব-হত্যার দায় অস্বীকার করলেও পরে মুখপাত্র অ্যান্টন বালাসিংহমের একটি বক্তব্যের মাধ্যমে তা স্বীকার করে নেয়।

১৯৯১ সালের ২১শে মে চেন্নাই (তদনীন্তন মাদ্রাজ শহর থেকে ৩০ মাইল দূরে শ্রীপেরামবুদুর শহরে রাজীব গান্ধীর শেষ জনসভাটির আয়োজন করা হয়েছিল। এই জনসভায় তিনি তামিলনাড়ুর শ্রীপেরামবুদুর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী শ্রীমতী মারাগতাম চন্দ্রশেখরের সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারে উপস্থিত হয়েছিলেন। এখানেই এলটিটিই জঙ্গী তেনমোঝি রাজারত্নমের আত্মঘাতী বোমার হামলায় নিহত হন রাজীব। তেনমোজি রাজারত্নমের অপর নাম ছিল ধানু। পরবর্তীকালে আত্মঘাতী বোমারুর প্রকৃত নাম জানা যায় গায়ত্রী।হত্যার দুই ঘণ্টা পূর্বে রাজীব চেন্নাই শহরে উপস্থিত হন। একটি সাদা অ্যাম্বাস্যাডারের কনভয়ে তিনি যাত্রা করেন শ্রীপেরামবুদুরের উদ্দেশ্যে। মাঝে কয়েকটি নির্বাচনী প্রচারস্থলে তার কনভয় থেমেছিল। শ্রীপেরামবুদুরে যাওয়ার সময়ে তার গাড়িতে এক বিদেশি সাংবাদিক তার যাত্রাসঙ্গী হয়েছিলেন। তিনি রাজীবের একটি সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। শ্রীপেরামবুদুরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে সভামঞ্চের উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করেন। সেখানে তার বক্তৃতাদানের কথা ছিল। এই সময় অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী, কংগ্রেস দলীয় সমর্থক এবং স্কুল ছাত্রছাত্রী তাকে মালা পরিয়ে স্বাগত জানাচ্ছিলেন। রাত দশটা দশ মিনিটে হত্যাকারী তানু তার দিকে এগিয়ে যায়। সে রাজীবকে অভিবাদন জানায়। তারপর তার পাদস্পর্শ করার আছিলায় পোষাকের নিচে বাঁধা আরডিএক্স ভর্তি বেল্টটি ফাটিয়ে দেন। পরমুহুর্তেই বিস্ফোরণে প্রাণ হারান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সহ বেশ কয়েকজন। হত্যার দৃশ্যটি এক স্থানীয় সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল। এই ক্যামেরা এবং তার ফিল্ম ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া যায়। সেই ক্যামেরাম্যান নিজেও সেই বিস্ফোরণে মারা যান। ঘটনাস্থলে নির্মিত রাজীব গান্ধী স্মারকটি বর্তমানে এই ছোটো শিল্পশহরটির অন্যতম পর্যটন আকর্ষন।

সূত্র: ইন্টারনেট

 

 

Related Images: